Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
শবে বরাতের তাৎপর্য ও করণীয় – Pratidin Sangbad

শবে বরাতের তাৎপর্য ও করণীয়

পবিত্র শবে বরাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ তাৎপর্যময় রজনী। এ রাতে মহান আল্লাহতালা তার রহমতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। পাপী বান্দাদের উদারচিত্তে ক্ষমা করেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন- এ জন্য এ রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ‘শবে বরাত’ ফার্সি ভাষার দুইটি শব্দ। ফার্সিতে ‘শব’ মানে রাত আর ‘বরাত’ মানে মুক্তি। সুতরাং ‘শবে বরাত’ এর অর্থ হলো মুক্তির রাত।

শবে বরাত হাদিসের চয়ন করা শব্দ নয়। হাদিসে রয়েছে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান বা মধ্য শাবানের রজনী। অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ সন্ধ্যার পর যে রাত সেটাই শবে বরাত।

এই রাত নিয়ে প্রচুর গবেষণা, মনীষীদের উক্তি ও পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত রয়েছে। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করে আমাদের প্রত্যেকের কিছু করণীয় ও বর্জনীয় থাকে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে। সেই করণীয় ও বর্জনীয় আপনাদের খেদমতে উপস্থাপন করছি।

করণীয়:

=> কুরআন হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালানো। কেননা এটার মাধ্যমেই আমরা সব বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে একটি সুন্দর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবো।

=> এই রাত সম্পর্কে একটি সহিহ হাদিস যা সুনানে ইবনে মাজাহ এর ইকামাতুস সালাত অধ্যায়ে আবু মুসা আল আশআরী থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (স) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মধ্য শা’বানের রাতে সমস্ত সৃষ্টির দিকে বিশেষ নজর দেন ও মুশরিক (আল্লাহর সাথে শিরককারী) এবং মুশাহিন (হিংসুক) ব্যতীতসকলকে ক্ষমা করে দেন।

এই হাদিসের আলোকে আমার করণীয় এই যে, আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি দিনই হিংসা ও আল্লাহর সাথে শিরক করা থেকে বেঁচে থাকবো। তবে যদি এ রাতে আমি ঘুমিয়েও থাকি তবে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।

=> এ রাতে যেমনভাবে আমরা ইবাদত করার জন্য বিশেষভাবে উদগ্রীব হই আমাদের উচিত রাতের বরকতময় সময়ে ইবাদত করার জন্য উদগ্রীব হওয়া। কেননা প্রতিটি রাতেই একটি বিশেষ সময় আছে যখন আল্লাহ তায়ালা আমাদের ডেকে ডেকে বলতে থাকেন যে, কার কী দরকার সে যেন আমার কাছে চায়, আমি দেবো। কে আছো ক্ষমা চাইবার আমি মাফ করে দেবো। কে আছে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। আর তা হলো প্রতি রাতের এক-তৃতীয়াংশ এর শেষ অংশে যা ফজর পর্যন্ত চলতে থাকে। হাদিসটি সহিহ মুসলিমের মুসাফিরের সালাত অধ্যায়ে হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে। সেই অর্থে প্রতিটি রাতই কিন্তু ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সুযোগ নিয়ে আসে একথা আমরা অকপটে বলতে পারি।

=> এই রাতে নিজস্ব পরিসরে নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ও তাসবিহ তাহলিল করা যেতে পারে। এবং এ রাতে কোনো ইবাদত করলে তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে। আর নফল সালাত বা ইবাদত ঘরেই করা বেশি ভালো। মসজিদের জড়ো হয়ে এটাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিলে তা অবশ্যই বিদয়াত বলে গণ্য হবে যা একটি পাপ। তবে অবশ্যই কিছু সময় ঘুমাতে হবে যেন ফজরের নামাজ জামায়াতে আদায় করতে পারি। যদি ঘুমের কারণে নামাজ বাদ পড়ে যায় তবে তা রাত্রের ইবাদতের অর্জনকে ম্লান করে।

=> মূলত সবচেয়ে সেরা রাত হলো রমজান মাসের শেষের ১০ দিন। এই রাতকে যেন আমরা সেই সমস্ত রাত থেকে বেশি মর্যাদাপূর্ণ রাত না ভাবি সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

=> এক কথায় দ্বীনের জ্ঞান রাখতে হবে অবশ্যই। তবেই আমাদের জ্ঞান আমাদের এই রাতে করণীয় সম্পর্কে আমাদের আমল করতে বেশি উৎসাহিত করবে। পাশাপাশি বর্জনীয় বিষয়গুলোও আমাদের সামনে চলে আসবে।

বর্জনীয়:

=> মসজিদে জড়ো হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দোয়া করা, ভিড় করা, এক কথায় আনুষ্ঠানিক সকল কাজ এ রাতে অবশ্যই বর্জন করা উচিত।

=> লাইটিং করা, হালুয়া রুটি খাওয়া, আতশবাজি ফুটানো, বিশেষ রজনী হিসেবে দলে দলে আনন্দের সঙ্গে উদযাপন অবশ্যই বর্জনীয়।

=> শবে বরাতকে কবর জিয়ারতের জন্য বিশেষভাবে গ্রহণ করা।

=> ইসলাম স্বীকৃত নয়, এমন প্রত্যেকটি কাজ সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও তা বর্জন করা।

=> শিরক থেকে নিজেকে বাঁচাতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা। পাশাপাশি হিংসা-বিদ্বেষ থেকে নিজেকে পুরোপুরি মুক্ত রাখা।

=> ফজরের জামায়াতের সময় ঘুমানো।

=> সারারাত জাগ্রত থাকা।

সর্বোপরি আমাদের সারা বছর শিরক ও হিংসা থেকে বেঁচে থেকে রাতে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করার অভ্যাস করাটাই হবে এই রাতের আসল উদ্দেশ্য ও অর্জন। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।